Friday 23 January 2015

আমার জীবনে প্রথম ভ্রমণের স্মৃতি

ভারতবর্ষের বেশ কয়েকটি প্রদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় পা রাখার সুযোগ হয়েছে। নানা জায়গার নানা ভাল মন্দ স্মৃতি। কিন্তু জীবনে প্রথমবার বেড়াতে যাবার স্মৃতি নিশ্চয় বাকি সব বেড়ানোর থেকে একটু হলেও বেশি গুরুত্ব পাবে। তাইনা? আমার জীবনের প্রথম বেড়াতে যাবার স্মৃতি বলতে দীঘার কথাই মনে পড়ে। মনে আছে ২৫শে ডিসেম্বর বাবা-মা-ছোটপিসিমা-পিসেমশাই-দুই পিসতুতো আর দুই মাসতুতো দিদির বড়সড় গ্রুপ নিয়ে যখন গিয়ে পৌঁছেছিলাম মানে বাবা-মায়ের ল্যাংবোট হয়ে আর কি? তখন দীঘায় থিক থিক করছে লোক। সকলেই আমাদের মতন মা-মাসি-পিসি-রাঙ্গা কাকার ছোট শালীর মেজভাসুরের জামাইএর পিসতুতো ভাইএর ছেলেকে নিয়ে ২৫শে ডিসেম্বরের ছুটিতে সমুদ্রের বালি মাখতে ঊর্ধ্বশ্বাসে দীঘা গিয়ে হাজির হয়েছে। কিন্তু দীঘাতে থাকার জায়গা তো আর পাল্লা দিয়ে বাড়েনি। ফলতঃ যা হবার তা হল। একসেট লোক নিজেদের জামাকাপড়-কাঁসি-চামচ-ছুরি-কাঁচি-মুড়ির প্যাকেট-বাচ্চার কাঁথা-ছেঁড়া গামছা ইত্যাদি ইত্যাদি সম্পত্তি ঠিক করে সামলে সুমলে প্যাক করে হোটেলের ঘর ছেড়ে বেরোতে না বেরোতেই আর একসেট লোক হুড়মুড় করে সে ঘরের দখল নিতে নিজেদের জামাকাপড়-কাঁসি-চামচ-ছুরি-কাঁচি-মুড়ির প্যাকেট-বাচ্চার কাঁথা-ছেঁড়া গামছা ইত্যাদি ইত্যাদি সম্পত্তি নিয়ে ঘরের পুরনো মালিকদের ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে পড়ছিল। আমার তখন হামলা করা বা হামলা সামলানো কোনটাই করার বয়স হয়নি তো তাই শুধু এটুকু মনে আছে- মাস্টারমশাই বলে কোন একজনের ছোট্ট একটা বাড়ির বাইরের সিঁড়িতে নিমপাতা খাওয়া মুখ করে বসে বসে মশার কামড় খাচ্ছিলাম। সে বাড়ির কোন একটা ঘর খালি হলেই আমরা সে ঘরের দখল নেব। মাস্টারমশাই এর সাথে তেমনই কথা হয়েছে বাবার। এই হল আমার জীবনের প্রথম ভ্রমণের স্মৃতি। ওহ, আরও একটা স্মৃতি আছে। সেটা হল মা একটা কালো-কমলা কম্বিনেশনে সোয়েটার তৈরি করেছিল আমার জন্য। বকুলফুল ডিজাইন। সেসব নাকি প্রচন্ড কঠিন ডিজাইন। তো সেই মায়ের সাধের ধুসকো মোটা আর প্রচন্ড টাইট সোয়েটারটিকে দীঘার মত সমুদ্র তীরবর্তী জায়গায় চড়চড়ে দুপুরের রোদে আমায় পরে বসে বসে ঘামতে হচ্ছিল।  কারণ ২৫শে ডিসেম্বর থিওরি অনুসারে নাকি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। সুতরাং হাতের কাছে এমন নির্বিবাদী একটি ট্যাঁ থাকতে থিওরির প্রোটোকল মানাতে আর কাকে লাগে? আর তাতেই আমার মুখটা ক্রমশঃ নিমপাতা খেয়ে ফেলার মতন হয়ে যাচ্ছিলো। পরে যখন সেইবার দীঘা যাবার ছবিগুলো দেখি প্রত্যেকটাতেই আমার মুখটা ওরকম রবিবার সকালে কালমেঘের রস গিলে বসে আছি বলে মনে হচ্ছে। সব ওই কুটকুটে-মোটা-টাইট সোয়েটারের দোষ। ছবিতে সোমাদিদি একগাল হেসে আমায় জড়িয়ে ধরে বসে আছে-আমি গম্ভীর হয়ে ভুরু কুঁচকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছি, মা বাবার হাসিমুখের মাঝে আমি স্যান্ডউইচ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি-মুখে একরাশ বিরক্তি, এমনকি ঘোড়ার পিঠে চেপেও চোখে আনন্দ বা পড়ে যাবার ভয় নয় ভুরু কুঁচকে বিরক্তমুখে তাকিয়ে আছি। সেসব ছবির একটিও আপাতত আমার কাছে নেই নইলে অবশ্যই আমি আপনাদের দেখাতাম।
                             
দীঘার সমুদ্র-বালি-ঝাউগাছ-সমুদ্রের ধারের লোভনীয় দোকানপাট কোনকিছু এতদিন পরে আমার মনে ঠাঁই পাইনি। সবকিছুকে ছাপিয়ে যেটা আছে তা হল মায়ের অনেক কষ্টে সাধ করে বুনে দেওয়া ওই কালো-কমলা-বকুলফুল মার্কা-মোটা-টাইট-কুটকুটে সোয়েটার পরে গরম আর কুটকুটুনির স্মৃতি।

এই আমার জীবনে প্রথম ভ্রমণের স্মৃতি। আপনি জীবনে প্রথমবার বেড়াতে কোথায় গেছিলেন?                              

2 comments:

  1. আমার প্রথম বেড়াতে যাবার জায়গা হল "পাথরা"। মেদিনীপুর শহরের কাছে। গেছিলাম বাবা আর মায়ের মধ্যে স্যান্ডউইচ হয়ে বাজাজের স্কুটারে বসে। জায়গাটা তো দারুন-ই, কিন্তু আমার একটা ব্যথা মনে আছে। ফেরার সময় স্কুটারের রেস্ট চলছে, সবাই ইতিউতি ঘুরছে, আমি অনেকক্ষন ধরে লক্ষ্য করে রাস্তার ধারে একটা ক্যাকটাস গাছে মারলাম এক লাথি। ভেবেছিলাম গাছটা নরম এবং হাতেনাতে বা পায়েটায়ে তৎক্ষনাৎ এই জঘন্য মানসিকতার শিক্ষা পেয়ে গেলাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহাহা......। হঠাত এই কুবুদ্ধি চেপেছিল কেন মাথায়? যাই হোক পাথরা খুবই সুন্দর জায়গা শুনেছি। একবার অবশ্যই যাবার আশা রাখি।

      Delete